রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় এইচ এম এরশাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের (হামিরকুৎসা উচ্চ বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দ্বন্দ্বে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান। এরই মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল।

১৯৬০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে অত্র এলাকায়। ঐতিহ্যবাহী ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক কৃতি সন্তান দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। আজো সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেন এর নিজ গ্রামে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অদ্যাবধি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সুনাম অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি। এরই মধ্যে গত হয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়টি ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদ হোসেনের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। পাশাপাশি হামিরকুৎসা গ্রামকে আলোকনগর গ্রাম নামে রুপান্তরিত করা হয়।

সেই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন হাসানুজ্জামান। প্রায় দেড়যুগ ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তাঁর দায়িত্বের শুরুতে স্বচ্ছতা থাকলেও কয়েক বছর থেকে তার ব্যতয় ঘটিয়েছেন বলে বিভিন্ন মহল অভিযোগ তুলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবী নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করে। ওই সময় তাদের দাবীকে প্রত্যাখান করলে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হামিরকুৎসা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিসি ক্যামেরা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে স্কুলে প্রবেশ এবং বের হওয়ার প্রযুক্তি (যন্ত্র) স্থাপনের কথা বলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে প্রায় চার লাখ টাকা সংগ্রহ করে। দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়াও পরীক্ষার প্রবেশপত্র, সনদ ও প্রশংসা পত্র উত্তোলন করতে টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র অভিভাবক আল-আমিন বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কোন পক্ষেরই উচিত হবে না পাঠদানে বিঘ্ন ঘটিয়ে স্বাভাবিক লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট করা।

সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। করোনায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য আমরা সকল শিক্ষক পাঠদান অব্যহত রেখেছি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি তৈয়ব আলী জানান, আমি সম্প্রতি এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে শিক্ষক-অভিভাবক সহ আমরা মিলে আলোচনার মাধ্যমে পাঠদানকে আরো ভালো করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান যেন তার কৃতিত্ব ধরে রাখতে পাওে সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান বলেন, আমি দীর্ঘ সময় ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি ছাড়াই বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকায় অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। একটি পক্ষ শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। সেই সাথে আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের নানান অভিযোগ তুলে অপপ্রচার চালিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করে চলেছে। তিনি আরো বলেন সিসি ক্যামেরার অর্থ দিয়ে বিদ্যারয়ের উন্নয়ন মূলক কর্মকন্ড পরিচালিত হয়েছে। দ্রুতই প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।